মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৪

পাইকগাছায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষে নারীরাও এখন আত্মবিশ্বাসী

নিউজ অফ পাইকগাছা ॥
    বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের কেওড়াতলা গ্রামের মহিলা চিংড়ি চাষিরা এখন পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক চিংড়ি চাষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। চিংড়ি চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও কারিগরি জ্ঞানের অভাব ও চাষ পদ্ধতি সনাতন হওয়ায় বছরের পর বছর চিংড়ির উৎপাদন কম ও লাভের পরিমান সীমিত হওয়ায় চিংড়ি চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। ঠিক এমনি সময়  চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি তথা অধিক লাভের মাধ্যমে দরিদ্র চিংড়ি চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডফিস বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত (এআইএন) প্রকল্পটি চিংড়ি চাষিদের পাশে এসে দাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতাই ২০১৩ সালের প্রথম দিকে কেওড়াতলা গ্রামের ২০ জন মহিলা চিংড়ি চাষিকে নিয়ে দল গঠনের মাধ্যমে তাদেরকে পরিকল্পিত ও আধুনিক চিংড়ি চাষ বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ের উপর হাতে-কলমে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে, ফলে চাষিরা চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনার ধাপ সমূহ যেমন- পঁচা কাদা উঠিয়ে ফেলে সঠিক নিয়মে ঘের প্রস্ততকরণ, ঘেরে পানির গভীরতা বেশি রাখা, সুস্থ-সবল রোগ মুক্ত পোনা মজুদ, মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখা, ঘেরে নিয়মিত চুন, সার ও খাদ্য প্রয়োগ করা, মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখা এবং রোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেন। এরপর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে দলের মহিলা চিংড়ি চাষিরা সনাতন চাষ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে ও আধুনিক পদ্ধতিতে ঘের পরিচালনা করে, ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর উৎপাদন এবং লাভ অনেক বেশি হয়েছে। তথ্য সংগ্রহকালে দলনেত্রী লতা রানী বলেন, বিগত বছরগুলোতে তাদের ঘেরে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বাগদা চিংড়ির গড় উৎপাদন ছিল মাত্র ২০-২৫ কেজি অথচ এ বছর তাদের ঘেরে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বাগদা চিংড়ির গড় উৎপাদন ৬৫-৭৫ কেজি যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি যা তারা কখনও আশা করেনি। তারা আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষে এখন খুবই  আত্মবিশ্বাসী। এ সময় উপস্থিত ছিল দলের অন্যান্য সদস্যাদের মধ্যে অনিমা, সুফলা, কুসুম, জয়ত্রী, রুপালি, পারুল, রেনুকা, ঊষা, শুভাশি প্রমুখসহ আশেপাশের অন্যান্য মহিলা ও পুরুষ চিংড়ি চাষিরা।  দলের চিংড়ি চাষিরা উপস্থিত সকলকে জানান, ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে হাতে-কলমে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ পাওয়ায় তারা সহজে মনে রেখে তা তাদের ঘেরে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হচ্ছে। দলের মহিলা চিংড়ি চাষিরা বিশ্বাস করেন, সকল চাষি যদি পঁচা কাদা তুলে ফেলে ভালো করে ঘের প্রস্তুত করে, পানির গভীরতা ঠিক রাখে, রোগমুক্ত ভালো পোনা মজুদ করে , নার্সারী প্রস্তুত করা সহ পোনার মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখে, নিয়মিত চুন, সার, খাদ্য প্রয়োগ করে এবং মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখে তাহলে পূর্বের তুলনায় চিংড়ির উৎপাদন অনেক বেশি পাওয়া যাবে। উপস্থিত সকল চিংড়ি চাষি, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সংবাদ প্রতিনিধেদের মাঝে কেওড়াতলার গ্রুপের মহিলা চিংড়ি চাষিরা মন্তব্য করেন, তারা এখন চিংড়ি চাষে খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং নিজেদেরকে সফল চিংড়ি চাষি বলে মনে করেন। তারা আরও বলেন, অত্র অঞ্চলের সকল মহিলা চিংড়ি চাষিরা যদি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে করে, তাহলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়িয়ে তারা অর্থাৎ  মহিলা তথা নারীরাও   বাংলাদেশের চিংড়ি সেক্টরে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। পরিশেষে, তারা এই ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ইউএসএআইডি এবং এআইএন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন