শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ এবং এমপিও নীতিমালায় আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন


বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও নীতিমালায় বড় রকমের পরিবর্তন আসছে। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। একটি কর্মশালার মাধ্যমে শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে।
শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, প্রস্তাাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে অন্তত ৭৫ হাজার নতুন শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরির সংস্থান হবে। এর সুফল গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছাবে।
দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৬ হাজার ৬৮টি প্রতিষ্ঠানে তিন লাখ ৬০ হাজার ৬৪৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। আর কর্মচারী রয়েছেন প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৭৪ জন। সব মিলিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৬৬ হাজার জন।
সচিব জানান, নীতিমালা সংশোধিত হলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে প্রায় ৫১ হাজার ৫৩৪ শিক্ষক ও ২৩ হাজার ৭০৫ এমএলএসএস। এর মধ্যে নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি ও সামাজিকবিজ্ঞানে পৃথকভাবে শিক্ষকের পদ তিনটি হলে যোগ হবে ছয় হাজার ৬৫২ শিক্ষক। মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও চার বিষয়ে চারজন শিক্ষক নিলে যোগ হবে ১২ হাজার ৭৭৩ শিক্ষক। মাদ্রাসায় একইভাবে এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে সাত হাজার ৬০৬ শিক্ষক। এ ছাড়া সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের ২৬ হাজার ৬৮ শিক্ষক এমপিওভুক্তির সুযোগ পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ৭৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী যুক্ত হবেন।
খসড়া নীতিমালাটি তৈরি করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। পরিচালক মাধ্যমিক অধ্যাপক মো. এলিয়াছ জানান, গতবছরের ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এমপিও প্রদানের ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া নতুন কারিকুলাম ও ভৌগোলিক অবস্থান এবং নয়া বিষয়-বিন্যাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চাহিদা আর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এমপিও দেয়া হবে। এ কারণে এমপিও নীতিমালায় সংশোধন আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, একটি কমিটি নীতিমালা পরিবর্তনের ব্যাপারে কাজ করছে। তারাই এটি চূড়ান্ত করলে যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্র জানায়, এমপিও নীতিমালা সংশোধন করার লক্ষ্যে গত ২১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে মাউশিকে বলা হয়। এরপর ২৫ জানুয়ারি মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক অহিদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। অধ্যাপক অহিদুজ্জামান বলেন, মূল কাজটি তিনিই করেছেন। একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে এখন মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে একটি কর্মশালা হবে, যেখানে খসড়া চূড়ান্ত হবে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ) শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও প্রদান এবং জনবল কাঠামোসম্পর্কিত নির্দেশিকা শীর্ষক এই নীতিমালা এর আগে ২০১০ সালে একবার সংশোধন করা হয়। দ্বিতীয়বার এটি সংশোধন করা হয় ২০১৩ সালে। জানা গেছে, সংশোধিত নীতিমালায় দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
২০১৩ সালের সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি ও সামাজিকবিজ্ঞান- এ তিন বিষয় মিলিয়ে একজন শিক্ষক পাচ্ছে। এখন তিনটি বিষয়ের জন্যই তিনজন শিক্ষকের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে এসব বিদ্যালয়ে এমএলএসএসের সংখ্যা একজন থেকে বাড়িয়ে দুজন করা হবে। আর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি, সামাজিকবিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা- এ চার বিষয়ের জন্য তিনজন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হতো। এখন চার বিষয়েই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চারজন করে শিক্ষক পাবে। এর বাইরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় একজন করে এমএলএসএস ছিল তা বাড়িয়ে দুজন করা হবে। নীতিমালা সংশোধন কমিটির একজন সদস্য জানান, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সব শ্রেণীতে নতুন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ের জন্য পৃথক শিক্ষকের প্রয়োজন। আর বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় একজন করে এমএলএসএস রয়েছে। সেখানে গার্ড, মালী ও ঝাড়ুদার- এ তিন পদের জন্য একজন এমএলএসএস রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি সারা দিন দায়িত্ব পালন করে তার পক্ষে রাতে গার্ড দেয়া সম্ভব নয়। আবার কেউ রাতে দায়িত্ব পালন করলে স্কুল সময়ে কাজ করার জন্য কেউ থাকে না। এ সমস্যা সমাধানেই এমএলএসএসের সংখ্যা দুজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ করার ক্ষমতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে ছিল। এ বিষয়টি মাউশির হাতে আনা হবে।
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, বিজ্ঞানের শিক্ষকের বিষয়েও তারা সংশোধনী আনার প্রস্তাব রাখছেন। কেননা রসায়ন ও পদার্থ আর জীববিজ্ঞানের মতো বিষয় একজনের পক্ষে পড়ানো সম্ভব নয়। তাই জীববিজ্ঞানে আলাদা শিক্ষক দরকার। এটা নিয়োগ করা সম্ভব হলে শিক্ষার মান বাড়বে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের বলে জানান। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জনবল বৃদ্ধির কারণে সংশোধিত নীতিমালার ব্যাপারে এখন নতুন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি লাগবে। এরপর তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চূড়ান্ত করতে হবে।
তবে এলিয়াছের কর্মকান্ডে নাখোশ শিক্ষাসচিব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন