মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০১৪

যৌন ও প্রজনন শিাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলকসহ সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

॥ নিউজ অফ পাইকগাছা ॥
যৌন শিক্ষার প্রসংঙ্গটি হঠাৎ করে বাংলাদেশে উত্থাপিত হয়নি। বয়সসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীরা দীর্ঘ সময় ধরে বয়সসন্ধিকালীন পরিবর্তন মোকাবেলায় মানষিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এই বিপর্যয় নানাবিধ। যেমন বয়সসন্ধিকালে সংগঠিত শারীরিক পরিবর্তন আমাদের সমাজে ইতিবাচকভাবে গ্রহন করা হয়না। ফলে এই পরিবর্তনের মুখোমুখি কিশোর-কিশোরীরা নানারকম শারীরিক ও মানষিক সমস্যার সম্মুখিন হয়। আবার এই বয়সের পরিবর্তনের একটি কেন্দ্রীয় ত্রে হলো যৌনবিকাশ। এই বয়সে শিশুর মানষিক, শারিরীকসহ অন্যান্য বিকাশের পাশাপাশি যৌন বিকাশও সাধিত হয়। একজন মানুষের জীবনে যৌনবোধের আর্বিভাব অন্যান্য বিকাশের মতনই স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সামাজিকভাবে একে খোলাখুলি স্বীকৃতি দেয়া হয়না। জৈবিকভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে এই বোধের উন্মেষ ঘটলেও সামাজিক স্বীকৃতির অভাবে বড় হওয়ার অনুভূতি বয়সসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের জীবনে নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। এই প্রেেিতই গত এক দশক যৌন শিার প্রচলনের তাগিদ বোধ করছেন সমাজ গবেষক ও স্কুল শিকেরা। দেশে যৌনশিার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ইতোমধ্যে অক্সফাম এর অর্থায়নে গণস্বারতা অভিযানসহ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিার উপর কাজ করছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। সংস্থাগুলো যৌন শিার উপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও অপ্রতুলতার কারনে ঝুঁকির মধ্যে বেড়ে উঠছে দেশের কয়েক কোটি কিশোর-কিশোরী। পাঠ্য-পুস্তকে যৌন শিা অর্ন্তভূক্ত করা হলেও পাঠদানে শিকদের অনিহার কারনে গুরুত্বপূর্ণ এ শিা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিশোর কিশোরিরা।
বয়সসন্ধিকাল বলতে মুলত ১০-১৯ বছর বয়সকে বোঝানো হয়েছে। একজন মানুষের শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে অনেক বছর সময় লাগে। আমাদের শরীর সন্তান উৎপাদন ও ধারনের জন্য তৈরী হতে বেশ কিছু শারীরিক ও মানষিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বেড়ে উঠার এই নিয়মকেই বলা হয় বয়সসন্ধি বা চঁনবৎঃু।  প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে উঠার েেত্র এটি একটি চিহৃ বা মাইলস্টোন। এসময় শরীরে এক ধরনের হরমোন উৎপন্ন হয় যা শরীরের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়। বয়সসন্ধির মাধ্যমে একজন নারী বা পুরুষের প্রজনন মতার পূর্নাঙ্গতা পায়। সকলের েেত্র এই পরিবর্তন সমূহ একই সময় ঘটে না। কারো নিদৃষ্ট সময়ের আগে আবার কারও নিদৃষ্ট সময়ের পরে এটি ঘটতে পারে। সকলের জীবনেই এই ধরনের সময় আসে এবং এই সমেয় তাদেরকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
বয়সসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে পৃথক শারিরীক ও মানষিক আবেগীয় পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন মহিলাদের েেত্র স্তন বড় হতে থাকে, স্তনের গোলাকার অংশের (এরিওলা) থেকে নিপল (বোটা) দৃশ্যমান হয়। বাহুর নিচে এবং প্রজনন অংগের আশে পাশে চুল/লোম উঠতে শুরু করে, মুখে পিম্পল বা ব্রন উঠতে শুরু করে। যৌনপথে নির্বামল (ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ) শুরু হয়। ডিম্বানু নিঃসরন এবং রক্ত স্রাব শুরু হয়।
পুরুষের েেত্র পেনিস (পুরুষাঙ্গ) এবং টেস্টিকলস (অন্ডকোষ) বড় হতে শুরু করে। পুরুষাঙ্গ ও বাহুর নীচে চুল গজায়। মাঝে মাঝে রাতে অথবা অন্যকোন সময় নিজের ইচ্ছা, অনিচ্ছায় পুরুষাঙ্গ উত্থিত হয় এবং বীর্যপাত ঘটে। মুখের চারপাশে দাড়ি উঠতে শুরু করে, কন্ঠস্বরে ভাঙ্গন, এবং কন্ঠস্বর ভরাট হতে শুরু করে।
মানুষের জৈবিক ও সামাজিক জীবন চক্রে বয়সসন্ধিকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া স্বত্বেও আমাদের দেশে এই সময়টাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয় না। শিশুদের এই জটিল মুহুর্তে তাদের অনুভূতি এবং তাদের মনে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য কাউকে তারা পাশে পায় না। ফলে শৈশব থেকে কৈশর এবং কৈশর থেকে তারুণ্যে পৌছানোর সন্ধিনে জৈবিকভাবে এ পরিবর্তনের ব্যাখ্যা তাদের জানা থাকে না। কিন্তু জীবনের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায় উত্তরনের পরবর্তী সকল সামাজিক দায়িত্ব ও নিয়মকানুন তাদের মেনে চলতে হয়। যেমন মেয়েদের েেত্র একটু বড় হলে অর্থাৎ শৈশব থেকে কৈশরে পদার্পনের সাথে সাথে পোশাকের ধরন বদলে যায়। প্রতিবেশি ছেলে বন্ধুর সাথে আর খেলার অনুমতি পাওয়া যায় না। অনেক নিয়ম তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কেন এই নিয়ম। তার উত্তর না জানার কারনে শিশুটির মনে হয় বড় হওয়ার জন্যই এত বিধিনিষেধ। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই তার নিজের শরীরের পরিবর্তন সম্পর্কে তার মধ্যে ােভ জন্মে ও  নানা ধরনের মানষিক সমস্যা তৈরী হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় বয়সসন্ধিকালীন সমস্যা যথাযথ সমস্যা হিসাবে চিহিৃত নয়। ফলে প্রজনন এবং যৌন বিকাশকে একটি লজ্জার বিষয় হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে সাধারণত। এই নিশ্চুপতার কারনে শিশুরা নানাধরনের মানষিক, শারীরিক এমনকি কখনও কখনও যৌন নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছে। ফলে কিশোর-কিশোরীদের সমস্যাগুলো চিহিৃত করা প্রয়োজন এবং বয়সসন্ধিকালীন পরিবর্তন ও সমস্যাসংক্রান্ত শিা কার্যক্রম নির্ধারনের জন্য বয়সসন্ধিকালীন শিশু ও কিশোরদের জীবন ও সমস্যা কেন্দ্রীক গবেষনারও এেেত্র প্রয়োজন। এজন্য যৌন ও প্রজনন শিাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে এ শিা ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলকসহ এই শিার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনে রাষ্ট্র ও সামাজিকভাবে সমুন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজনবোধ মনে করছেন দেশের সমাজগবেষক ও স্কুল শিকরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন