শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০১৪

বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারনা ও বিরাজমান সামাজিক নিরবতা- পার্ট-২

॥নিউজ ডেস্ক॥
বাংলাদেশের বয়সন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীরা যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় সেই সমস্যা সৃষ্টির অন্যতম কারন বয়সন্ধিকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব। বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলার হাতিয়ার হ’ল বয়সন্ধিকাল সম্পর্কে সঠিক বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য। বয়সন্ধিকালীন শারীরিক, মানসিক অনুভূতিগত পরিবর্তন সম্পর্কে একটি শিশুকে বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যের মাধ্যমে পূর্ব প্রস্তুতি প্রদানের ল্েয প্রদানকৃত শিাই বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন সংক্রান্ত শিা বা যৌনশিা। অর্থাৎ যৌনশিা হ’ল যৌনেেত্র শারিরীক, মানসিক ও আচারণগত বিষয়ে শ্রেণীকে পাঠদান। এই পাঠদান পুস্তক ও অন্যান্য প্রকাশনার মাধ্যমেও করা সম্ভব। এই শিা কখনও যৌনক্রীয়াকে উৎসাহিত করে না। বরং বয়সন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে সঠিক ও সুস্থু ধারনা দেয়।
মানুষের জৈবিক ও মানসিক জীবনচক্রে বয়সন্ধিকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া স্বত্বেও আমাদের দেশে এই সময়টাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয় না। সামাজিক স্বীকৃতির অভাবে বড় হওয়ার অনুভূতি বয়সন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের জীবনে নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। বয়সন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীদের শারিরীক পরিবর্তন, সমস্যা এবং যৌনশিার প্রয়োজনীয়তার উপর দীর্ঘদিন গবেষনা পরিচালনা করেছেন অক্সফাম এর অর্থায়নে গনস্বারতা অভিযান। সংস্থার এক প্রতিবেদনে বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন প্রসংগে সামাজিক নিরাবতা পালনের মধ্যেই বয়সন্ধিকালীন সমস্যা সৃষ্টির কারন নিহিত হিসাবে চিহিৃত করা হয়েছে। সামাজিকভাবে ধরে নেয়া হয় যে, শিশুরা এ বিষয়ে কারও সাথে কথা বলতে চায়না, কারন এটা লজ্জার বিষয়, এ বড়দের বিষয়। কিন্তু মাসিক বা গলাভেঙ্গে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে তারা প্রাপ্ত বয়স্কে পৌছানোর প্রক্রিয়াতে প্রবেশ করছে। পরিবর্তনগুলো তার জীবনে ঘটছে। সুতরাং এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জৈবিকভাবে অজ্ঞাত থাকতে পারে না শিশুরা। শিশুদের জীবনে জৈবিক পরিবর্তনগুলো ঘটে বয়সন্ধিকালে। তারা এই পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়, অনুভব করে, অবাক হয় কিন্তু পরিবারের বা সমাজের কেউ তাদের কাছে এ বিষয়টি (বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন ও যৌন পরিপক্কতা অর্জন) ব্যাখা করে না। এই নিরবতা বয়সন্ধিকালীন শিশুকে একা করে। বলা হয়ে থাকে এই বয়সি শিশুরা একাকি থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এই একাকিত্ব তৈরী হতো না যদি পরিবারের সকলে একজন কিশোর বা কিশোরীর পাশে দাড়াতো। তাকে এই পরিবর্তন গ্রহনের জন্য প্রস্তুত করতো। বেশিরভাগ েেত্রই আমাদের দেশে অভিভাবকেরা “তুমি এখন বড় হয়েছো, তাই তোমার এরকম হয়েছে, এখন থেকে তোমাকে অনেককিছু মেনে চলতে হবে” তুমি কেন পাশের বাসার ছেলে/মেয়েটার সাথে কথা বললে” এ ধরনের কয়েকটি সাধারণ বাক্যে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। এই আদেশনামাগুলো থেকে শিশুদের কাছে কোন কিছুই স্পষ্ট হয় না। বরং তাদের কাছে গ্রহনযোগ্য নয় এমন কতগুলো নিয়ম তাদের উপর আরোপিত হয়। ফলে সে তার পরিবারের সকলের থেকে দূরত্ববোধ করে। এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন সংক্রান্ত কৌতুহল পুরনের চেষ্ঠা করে। যেমন বন্ধুরা মিলে পর্নো ম্যাগাজিন পড়ে, বাড়ির কাজের বুয়াদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে ভীতিকর তথ্য জানে। যেমন মাসিকের সময় জ্বীনের আছর হতে পারে, খবরের কাগজে ধর্ষনের ঘটনা পড়ে, ধর্মের বইয়ে গোছলের বর্ননা পড়ে, তাদের মনে এই পরিবর্তন বিষয়ে যেসকল প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তার উত্তর জানার জন্য শিশুরা সবার প্রথম বাবা, মা, ভাই-বোনের বা নিকট আত্মীয়ের কাছে যায়। সেখানে কোন উত্তর না পেয়ে ধমক খেয়ে অন্য উপায় খুঁজে বের করে। যার বেশিরভাগ েেত্রই তাদের জন্য বিপদজনক। বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন ও যৌন পরিপক্কতা সম্পর্কে কোন বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য না দিয়ে আমাদের সমাজ তাদেরকে এক ধরনের বিপদের মুখে ঠেলে দেয়।
    বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরাই সঠিক তথ্যের পরিবর্তে নেতিবাচক প্রভাবযুক্ত জ্ঞানলাভ করে। স্কুলে বা বাড়ীতে এ শিা দেয়া হয় না বলে এর বদলে যে নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় তারা তথ্য লাভ করে তাতে করে বড় হওয়া সম্পর্কে শিশুরা নানাধরনের ভুল ধারনা বা তথ্য জানতে পারে। বয়সন্ধিকালীন ভ্রান্ত ধারনাগুলা হচ্ছে যেমন-মেয়েদের েেত্র বলা হয়ে থাকে মাসিক এক ধরনের অসুস্থতা ও লজ্জার বিষয়। মাসিকের রক্ত দুষিত রক্ত, ও মাসিকের সময় মাছ, টক, বা আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। প্রকৃত অর্থে মাসিক কোন লজ্জার বিষয় নয়, মাসিক সব মেয়েরই হয়, মাসিকের রক্ত দুষিত রক্ত নয়, হরমোনের প্রভাবে প্রতিমাসে জরায়ুতে এই রক্ত তৈরী হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মেই বের হয়ে যায়। এসময় মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়ে যায়। এজন্য এ সময় শরীরের য় পুরন হয় এমন খাবার যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বেশি করে খেতে হয়। ছেলেদের েেত্র ভ্রান্ত ধারনাগুলো হচ্ছে, স্বপ্নদোষ খারাপ ছেলেদের হয়ে থাকে। এটি হলে শরীরের সব শক্তি বের হয়ে যায়। এটি একটি রোগ তাই ধীরে ধীরে যৌনশক্তি কমে যায়। খারাপ স্বপ্ন দেখলে স্বপ্নদোষ হয়। আসলে স্বপ্নদোষ প্রায় সব ছেলেরই হয় এটা খারাপ বা ভাল ছেলে এমন কিছুই নয়। শরীরের কোন শক্তিই বের হয়ে যায় না। শরীরের ভিতর যে বীর্য তৈরী হয়, স্বাভাবিক নিয়মেই তা বের হয়ে যায় এবং এটি কোন রোগ নয়। ফলে যৌনশক্তি কমার কোন কারন নেই।
    বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের তথ্য শিশুদেরকে এ পরিবর্তন সহজভাবে গ্রহন করার জন্য সাহায্য করে না। বরং এই পরিবর্তনের একটি ভয়ংকর রুপ দেয়। বিশেষ করে মেয়েদের েেত্র এ পরিবর্তন সম্পর্কে মানষিক প্রস্তুতির অভাবে অনেক ধরনের মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তারা। ছেলে ও মেয়েদের েেত্র বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো ছেলেদের েেত্র রাত্রিকালীন শুক্র নিঃস্বরন এবং মেয়েদের েেত্র মাসিক। এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন শিশুরা কিভাবে গ্রহন করে তার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন নিয়ে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা এ বয়সের শিশুদের কি ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে। বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সামাজিক নিরাবতার কারনেই স্বাভাবিক পরিবর্তনের এ জটিল রোগ তৈরী হয়েছে। বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন যে জৈবিক ও স্বাভাবিক এই তথ্য জানা প্রত্যেকটি নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারন বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তনের জৈবিক ও স্বাভাবিক দিক সমাজে উন্মেচিত হয়নি বলেই একে ঘিরে সমাজে নেতিবাচক ধ্যান-ধারনা তৈরী হয়েছে। বয়সন্ধিকালীন পরিবর্তন, সমস্যা নেতিবাচক ধ্যানধারনা, সামাজিক নিরবতা ও ভ্রান্ত ধারনা, বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে এবং কিশোর-কিশোরীদের যৌনশিা প্রদানের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে গবেষকদের অভিমত।
                                       পাইকগাছায় ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত; গনধোলাই শেষে ৩ ছিনতাইকারীকে পুলিশে সোপর্দ
নিউজ অফ পাইকগাছা ॥
পাইকগাছায় এক খাদ্যসামগ্রী বিক্রেতা (বেকারী সেলসম্যান) কে ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় স্থানীয় জনতা ৩ ছিনতাইকারীকে আটক গনধোলাই শেষে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আহত ব্যবসায়ীকে আশংকাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের কাটাখালী সড়কে।
থানাপুলিশ সুত্রে জানাগেছে, ঘটনারদিন উপজেলার মাহমুদকাটী গ্রামের নারান চন্দ্রের দু’পুত্র কৃষ্ণপদ দাশ ও সুদেব কুমার দাশ, আমাদি ও বড়দল এলাকা থেকে খাদ্যসামগ্রি বিক্রয়শেষে নছিমনযোগে ফিরে আসার সময় চাঁদখালী ইউনিয়নের শিববাটি ও কাটাখালী সড়কের মধ্যবর্তীস্থানে পৌছানোর পর পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা ৬ ছিনতাইকারী তাদেরকে গতিরোধ করে ছুরিকাঘাত করে কাছে থাকা নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয় লোকজন আশংকাজনক অবস্থায় ব্যবসায়ী কৃষ্ণপদ দাশকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এদিকে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যবহৃত মটরসাইকেল অকেজো হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে ধরে ফেলে এবং গনধোলাই দেয়। পরে খবর পেয়ে থানার এসআই সিরাজুল ও এসআই জালাল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে শ্যামনগর গ্রামের মৃত আনছার গাজীর পুত্র বদরুল, মাহমুদকাটি গ্রামের হযরত গাজীর পুত্র নসিমন চালক রাসেল গাজী ও গদাইপুর গ্রামের ইনতাজ গাজীর পুত্র মনি গাজীসহ ৩ ছিনতাইকারীকে আটক করে। এসময় তাদের ব্যবহৃত টিভিএস ১০০ সিসি মটরসাইকেল এবং ছিনতাই হওয়া ৫ হাজার ৩১৬ টাকা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সুদেব কুমার দাশ বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে দ্রুত বিচার আইনে থানায় মামলা করেছে বলে এসআই আব্দুল খালেক জানান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতার অভিযান অব্যহত ছিল।

1 টি মন্তব্য: