শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪

নারীর ক্ষমতায়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও স্বনির্ভরতা অর্জনে সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম

১ নভেম্বর শনিবার জাতীয় সমবায় দিবস
নিউজ অফ পাইকগাছা ॥
    নারীর ক্ষমতায়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, স্বনির্ভরতা অর্জন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের সমবায় সংগঠনগুলো। সমবায়ের তীর্থস্থান হিসাবে খ্যাত খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় রয়েছে একটি সমবায় ব্যাংকসহ ৩৭২ টি সমবায় সমিতি। ইতোপূর্বে এ উপজেলা থেকে ২ ব্যক্তি ও ২টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। সংগঠনের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্ধেক জনগোষ্ঠি। সমবায়ের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যাতে এ অঞ্চলে সমবায়ের কাছে দারিদ্রতা পরাজিত হবে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই মনে করেন সমবায় হতে পারে দারিদ্র বিমোচনের মূল চাবিকাঠি। আজ ১ নভেম্বর সারাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় সমবায় দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে সমবায় বিভাগ ও সমবায়ীবৃন্দ র‌্যালী, আলোচনাসভা ও পুরস্কার বিতরণসহ আয়োজন করেছেন নানা অনুষ্ঠান।
    ১৯০৪ সালে কো-অপারেটিভ ব্যাংকের মাধ্যমে সুন্দরবন সংলগ্ন এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম শুরু হয় সমবায় কার্যক্রম। এরপর ১৯০৯ সালে জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানি আশ্চার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি রায়) তার জন্মস্থান উপজেলার রাড়–লীতে প্রতিষ্ঠা করেন রাড়–লী কো-অপারেটিভ ব্যাংক। এরপর ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ ঝুঁকে পড়ে সমবায় আন্দোলনে। বর্তমানে সমবায় কার্যক্রম এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, এমন কোন পাড়া মহল্লা নেই যেখানে সমবায় সংগঠন নেই। বর্তমানে উপজেলায় সমবায় সমিতির সংখ্যা ৩৭২টি। এসব সমবায়ের শেয়ার ও সঞ্চয় আমানতের পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি। এলাকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠি সমবায়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যার মধ্যে ৪০ ভাগই হচ্ছে নারী। সমবায়ের মাধ্যমে সঞ্চয় গচ্ছিত করে আর্তনির্ভরশীল হয়েছে হাজারো মানুষ। সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই কিনছে ভ্যান, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহন। এতে করে অনেক বেকার যুবকের সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। কৃষি, মৎস্য ও ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। সমবায়ের নানামুখী এসব পদক্ষেপের কারনে প্রতিনিয়ত কমছে বেকারত্বের সংখ্যা। হ্রাস পেয়েছে সামাজিক অপরাধের প্রবনতা। নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় ইতিবাচক ভূমিকায় সমবায়ে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে ধনী, গরীব, মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুবাদে ইতোপূর্বে এ উপজেলা থেকে দু’ব্যক্তি ও দু’টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। সমবায়ী হিসাবে ২০০০ সালে ষোলআনা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রয়াত মেয়র আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান এবং ২০০৩ সালে ফসিয়ার রহমান কৃষি ও জনকল্যাণ সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব ফসিয়ার রহমান এবং প্রতিষ্ঠান হিসাবে ১৯৯৫ সালে ষোলআনা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি ও ২০১১ সালে ফসিয়ার রহমান কৃষি ও জনকল্যান সমবায় সমিতি এ পুরস্কার অর্জন করেন। এ দু’টি সংগঠনের পাশাপাশি খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমাবায় সমিতি, জিরবুনিয়া সমবায় সমিতি, জোনাকি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি ও সলুয়া পল্লী দুগ্ধ সমবায় সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সুনাম অর্জন করেছে। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমবায় মেলায় স্থান করে নিয়েছে কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। সলুয়া পল্লী দুগ্ধ সমবায় সমিতির কথা না বললেই নয়-বছর খানেক আগেই সমবায় বিভাগের প্রাক্তন সচিব মিহির কান্তি মজুমদারের প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠা হয় এ সংগঠনটি। সংগঠনের ১২৫ দলিত সম্প্রদায়কে বিনাসুদে প্রদান করা হয় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋন। ঋনের টাকায় সংগঠনের সদস্যরা শুরু করেন গাভী পালন। বর্তমানে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার লিটার দুধ। উৎপাদিত দুধ সরবরাহ করা হয় মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে। এভাবেই এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গড়ে ওঠা সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সামাজিক নিরাপত্তায়। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এফএম সেলিম আখতার জানান-এলাকার সমবায় সমিতিগুলো এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে, এখানে তেমন কোন ক্রেডিট নির্ভর এনজিও’র কার্যক্রম নাই। সমবায়ের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যাতে সমবায়ের কাছে দারিদ্রতা পরাজিত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৪

পাইকগাছায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষে নারীরাও এখন আত্মবিশ্বাসী

নিউজ অফ পাইকগাছা ॥
    বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের কেওড়াতলা গ্রামের মহিলা চিংড়ি চাষিরা এখন পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক চিংড়ি চাষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। চিংড়ি চাষের অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও কারিগরি জ্ঞানের অভাব ও চাষ পদ্ধতি সনাতন হওয়ায় বছরের পর বছর চিংড়ির উৎপাদন কম ও লাভের পরিমান সীমিত হওয়ায় চিংড়ি চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। ঠিক এমনি সময়  চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি তথা অধিক লাভের মাধ্যমে দরিদ্র চিংড়ি চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডফিস বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত (এআইএন) প্রকল্পটি চিংড়ি চাষিদের পাশে এসে দাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতাই ২০১৩ সালের প্রথম দিকে কেওড়াতলা গ্রামের ২০ জন মহিলা চিংড়ি চাষিকে নিয়ে দল গঠনের মাধ্যমে তাদেরকে পরিকল্পিত ও আধুনিক চিংড়ি চাষ বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ের উপর হাতে-কলমে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে, ফলে চাষিরা চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনার ধাপ সমূহ যেমন- পঁচা কাদা উঠিয়ে ফেলে সঠিক নিয়মে ঘের প্রস্ততকরণ, ঘেরে পানির গভীরতা বেশি রাখা, সুস্থ-সবল রোগ মুক্ত পোনা মজুদ, মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখা, ঘেরে নিয়মিত চুন, সার ও খাদ্য প্রয়োগ করা, মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখা এবং রোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেন। এরপর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে দলের মহিলা চিংড়ি চাষিরা সনাতন চাষ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে ও আধুনিক পদ্ধতিতে ঘের পরিচালনা করে, ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর উৎপাদন এবং লাভ অনেক বেশি হয়েছে। তথ্য সংগ্রহকালে দলনেত্রী লতা রানী বলেন, বিগত বছরগুলোতে তাদের ঘেরে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বাগদা চিংড়ির গড় উৎপাদন ছিল মাত্র ২০-২৫ কেজি অথচ এ বছর তাদের ঘেরে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বাগদা চিংড়ির গড় উৎপাদন ৬৫-৭৫ কেজি যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি যা তারা কখনও আশা করেনি। তারা আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষে এখন খুবই  আত্মবিশ্বাসী। এ সময় উপস্থিত ছিল দলের অন্যান্য সদস্যাদের মধ্যে অনিমা, সুফলা, কুসুম, জয়ত্রী, রুপালি, পারুল, রেনুকা, ঊষা, শুভাশি প্রমুখসহ আশেপাশের অন্যান্য মহিলা ও পুরুষ চিংড়ি চাষিরা।  দলের চিংড়ি চাষিরা উপস্থিত সকলকে জানান, ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে হাতে-কলমে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ পাওয়ায় তারা সহজে মনে রেখে তা তাদের ঘেরে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হচ্ছে। দলের মহিলা চিংড়ি চাষিরা বিশ্বাস করেন, সকল চাষি যদি পঁচা কাদা তুলে ফেলে ভালো করে ঘের প্রস্তুত করে, পানির গভীরতা ঠিক রাখে, রোগমুক্ত ভালো পোনা মজুদ করে , নার্সারী প্রস্তুত করা সহ পোনার মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখে, নিয়মিত চুন, সার, খাদ্য প্রয়োগ করে এবং মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখে তাহলে পূর্বের তুলনায় চিংড়ির উৎপাদন অনেক বেশি পাওয়া যাবে। উপস্থিত সকল চিংড়ি চাষি, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সংবাদ প্রতিনিধেদের মাঝে কেওড়াতলার গ্রুপের মহিলা চিংড়ি চাষিরা মন্তব্য করেন, তারা এখন চিংড়ি চাষে খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং নিজেদেরকে সফল চিংড়ি চাষি বলে মনে করেন। তারা আরও বলেন, অত্র অঞ্চলের সকল মহিলা চিংড়ি চাষিরা যদি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে করে, তাহলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়িয়ে তারা অর্থাৎ  মহিলা তথা নারীরাও   বাংলাদেশের চিংড়ি সেক্টরে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। পরিশেষে, তারা এই ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ইউএসএআইডি এবং এআইএন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।  

রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৪

পাইকগাছায় আধুনিক চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনায় আজিজুর রহমানের সাফল্য

নিউজ অফ পাইকগাছা  ॥
    বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু চাষ পদ্ধতি সনাতন হওয়ায় চিংড়ি চাষিদের উৎপাদন কম, লাভের পরিমান সীমিত এবং বেশিরভাগ সময়ই তাদেরকে লোকসান গুণতে হয়। চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি তথা অধিক লাভের মাধ্যমে দরিদ্র চিংড়ি চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডফিস বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত অ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম এন্ড নিউট্রিশন (এআইএন) প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার চিংডী চাষীদের মাঝে পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক পদ্ধতিতে চিংডী চাষ ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা করে আসছে বিগত ২০১২ সাল থেকে।
    খুলনা বিভাগের পাইকগাছা থানার কপিলমুনি ইউনিয়ন এর পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার মাগুরা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র আজিজুর রহমান একজন দরিদ্র চিংড়ি চাষি। তিনি বিগত ১৫ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছে কিন্তু গতানুগতিক সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করার কারনে কখনই আশানুরুপ উৎপাদন পায়নি ফলে তার অর্থনৈতিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। গত বছর তিনি তার ৯৯ শতক আয়তনের ঘের থেকে মাত্র ৭৩ কেজি বাগদা, ৩২ কেজি গলদা চিংড়ি এবং ১২৭ কেজি সাদা মাছ উৎপাদন করতে পেরেছিলেন। যার মোট মূল্য ৮৩ হাজার টাকা মাত্র। অবশেষে এ বছেরর প্রথম দিকে এআইএন প্রকল্পের আওতাধীন রঘুনাথপুর গ্রামের চিংড়ি চাষি দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রতিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি  সঠিক নিয়মে ঘের প্রস্তুত, সুস্থ-সবল রোগ মুক্ত পোনা মজুদ, ঘেরে নিয়মিত চুন, সার ও খাদ্য প্রয়োগ, মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান লাভ করেন এবং বুঝতে পারেন যে এসব বিষয়গুলোর উপর অবহেলার কারনেই চিংড়ি চাষিরা খতিগ্রস্থ হচ্ছে বছরের পর বছর। তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ঘের পরিচালনা করে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর অনেক বেশি লাভবান হয়েছেন।  আজিজুর রহমান  আধুনিক এম টি টি পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে এ বছর তিনি তার ৯৯ শতক ঘের থেকে এ পর্যন্ত ১৭৭ কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করেছে যার মূল্য ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা এবং ৫২০ কেজি সাদা মাছ উৎপাদন করেছে যার মূল্য ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। প্রতিনিধিকে জানান- তিনি আশা করেন তার ঘের থেকে  আরও ৬০-৮০ হাজার টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ বিক্রয় হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, সকল চাষি যদি পঁচা কাদা তুলে ফেলে ভালো করে ঘের প্রস্তুত করে, পানির গভীরতা ঠিক রাখে, রোগমুক্ত ভালো পোনা মজুদ করে , নার্সারী প্রস্তুত করা সহ পোনার মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখে, নিয়মিত চুন, সার, খাদ্য প্রয়োগ এবং মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখে তাহলে পূর্বের তুলনায় চিংড়ির উৎপাদন অনেক বেশি পাওয়া যাবে।
    বর্তমানে তিনি নিজেকে একজন সফল চিংড়ি চাষি বলে মনে করেন এবং সকল চিংড়ি চাষিকে পরিকল্পিতভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করার জন্য আহ্বান করেন। পরিশেষে, আজিজুর রহমান তথ্য প্রদানকালে উপস্থিত সকল চিংড়ি চাষি, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সংবাদ প্রতিনিধেদের মাঝে এই ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ইউএসএআইডি এবং প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০১৪

পাইকগাছায় আ’লীগের আহবায়ক কমিটি প্রকাশের পর বিতর্কিতরা বিপাকে; বাদ পড়া ত্যাগী নেতারা বিক্ষুব্ধ

“গো চেনায় দুধ নষ্ঠ”
নিউজ অফ পাইকগাছা ॥
খুলনার পাইকগাছায় উপজেলা আওয়ামীলীগের ৪৭ সদস্যের আহবায়ক কমিটি প্রকাশের কমিটির নতুন মুখদের মধ্যে ইতিবাচক বক্তব্য লক্ষ্য করা গেলেও বর্তমান, সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ঘরানার কমিটি থেকে বঞ্চিত রাজনৈতিক নেতারা রীতিমত রাগে ক্ষোভে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে। দলের অনেক ত্যাগী ও সংকটকালের পরিক্ষিত নেতারা অভিযোগ করেছেন কমিটিতে অজ্ঞ, অরাজনৈতিক, বির্তর্কিত এমনকি দলের প্রয়োজনের চাইতে ব্যক্তি প্রয়োজনে ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের স্থান দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামীলীগের তৃনমুলের নেতৃত্ব, কতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরিন দ্বদ্ধ নিরসন করা না গেলে জামায়াত-বিএনপিকে মোকাবেলা করা দুরের কথা একসময় সংগঠনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন। ঘর সামলাতে অবিলম্বে তৃনমুল নেতাকর্মীরা জেলা ও হাইকমান্ডের নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট দলীয় একাধিক সুত্রে জানিয়েছে, তৃনমূল ও উপজেলায় আওয়ামীলীগের সংগঠনকে নতুন মাত্রায় সাজাতে এবং গতিশীল করতে প্রায় ১ যুগ আগের উপজেলা কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গাজী মোহাম্মদ আলীকে আহবায়ক করে ৪৭ সদস্যের একটি কমিটি গনমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কমিটি প্রকাশের পর দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। দলের অভ্যন্তরে এবং সর্বত্রই কমিটির স্থান পাওয়া সদস্যরা বর্তমান এমপি এ্যাড. শেখ মোঃ নূরুল হক, সাবেক এমপি এ্যাড. সোহরাব আলী সানা ও বিদায়ী সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশীদুজ্জামানের সমর্থক কি না বা কে কার লোক এটাই নিয়ে সর্বত্রই চুলচেরা বিশ্লেষন চলছে। একটি সুত্র জানিয়েছে দলের চাইতে ব্যক্তির লোক পরিচয়ের এই সংস্কৃতির চর্চা চলতে থাকলে দলের তৃনমুলে এক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন। অপরদিকে এ কমিটিতে অনেক অরাজনৈতিক, এলাকায় বিতর্কিত ব্যক্তিদের ঢোকানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। উপজেলা কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শিক্ষক কুমুদ রঞ্জন ঢালী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেছেন-সারাজীবন দলের প্রয়োজনে দূর্দিন-সুদিনে শ্রম, অর্থ দিয়েও সংগঠনের কাজ করে আসছি। অথচ নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া আমার ইউনিয়নে এক ব্যক্তি যে কখনও কোন সময় দলের কর্মকান্ডে জড়িত ছিল না, এমনকি নূন্যতম যার সদস্যপদও নাই এমন ব্যক্তিকে ঢোকানো হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সোলাদানা ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল কৃষ্ণ সরকার বলেন-দীর্ঘদিন ধরে দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছি এবং একাধিকবার মামলার স্বীকারও হয়েছি। তিনি বলেন এক সময়ে যারা দলের বিরোধী লোক ছিল এমন ব্যক্তি পঞ্চানন নামের এক বিতর্কিত লোককে এ কমিটিতে স্থান দেয়ার ঘটনায় তিনি বিষ্মিত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা এটাকে প্রথম রাউন্ডের খেলা বলে মনে করছেন এবং আগামীতে উপজেলা মুল কমিটিতে স্থান পেতে উভয় গ্রুপের শীর্ষ নেতাদের সাথে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া সাবেক উপজেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিজন বিহারী সরকার বলেছেন- সবকিছুই ভাল হলেও কমিটিতে দু’একজন ব্যক্তির নাম থাকায় এটাকে তিনি এক বালতি দুধে এক ফোটা গো চেনার সাথে তুলনা করেছেন। অনুসন্ধানে জানাগেছে, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উভয় অংশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ না দিলে এবং যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন না করলে তৃনমুলে দলের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন।