রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৪

পাইকগাছায় আধুনিক চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনায় আজিজুর রহমানের সাফল্য

নিউজ অফ পাইকগাছা  ॥
    বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু চাষ পদ্ধতি সনাতন হওয়ায় চিংড়ি চাষিদের উৎপাদন কম, লাভের পরিমান সীমিত এবং বেশিরভাগ সময়ই তাদেরকে লোকসান গুণতে হয়। চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি তথা অধিক লাভের মাধ্যমে দরিদ্র চিংড়ি চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডফিস বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত অ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম এন্ড নিউট্রিশন (এআইএন) প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার চিংডী চাষীদের মাঝে পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক পদ্ধতিতে চিংডী চাষ ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা করে আসছে বিগত ২০১২ সাল থেকে।
    খুলনা বিভাগের পাইকগাছা থানার কপিলমুনি ইউনিয়ন এর পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার মাগুরা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র আজিজুর রহমান একজন দরিদ্র চিংড়ি চাষি। তিনি বিগত ১৫ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছে কিন্তু গতানুগতিক সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করার কারনে কখনই আশানুরুপ উৎপাদন পায়নি ফলে তার অর্থনৈতিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। গত বছর তিনি তার ৯৯ শতক আয়তনের ঘের থেকে মাত্র ৭৩ কেজি বাগদা, ৩২ কেজি গলদা চিংড়ি এবং ১২৭ কেজি সাদা মাছ উৎপাদন করতে পেরেছিলেন। যার মোট মূল্য ৮৩ হাজার টাকা মাত্র। অবশেষে এ বছেরর প্রথম দিকে এআইএন প্রকল্পের আওতাধীন রঘুনাথপুর গ্রামের চিংড়ি চাষি দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রতিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি  সঠিক নিয়মে ঘের প্রস্তুত, সুস্থ-সবল রোগ মুক্ত পোনা মজুদ, ঘেরে নিয়মিত চুন, সার ও খাদ্য প্রয়োগ, মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান লাভ করেন এবং বুঝতে পারেন যে এসব বিষয়গুলোর উপর অবহেলার কারনেই চিংড়ি চাষিরা খতিগ্রস্থ হচ্ছে বছরের পর বছর। তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ঘের পরিচালনা করে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর অনেক বেশি লাভবান হয়েছেন।  আজিজুর রহমান  আধুনিক এম টি টি পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে এ বছর তিনি তার ৯৯ শতক ঘের থেকে এ পর্যন্ত ১৭৭ কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করেছে যার মূল্য ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা এবং ৫২০ কেজি সাদা মাছ উৎপাদন করেছে যার মূল্য ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। প্রতিনিধিকে জানান- তিনি আশা করেন তার ঘের থেকে  আরও ৬০-৮০ হাজার টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ বিক্রয় হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, সকল চাষি যদি পঁচা কাদা তুলে ফেলে ভালো করে ঘের প্রস্তুত করে, পানির গভীরতা ঠিক রাখে, রোগমুক্ত ভালো পোনা মজুদ করে , নার্সারী প্রস্তুত করা সহ পোনার মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখে, নিয়মিত চুন, সার, খাদ্য প্রয়োগ এবং মাটি ও পানির গুনাগুন ঠিক রাখে তাহলে পূর্বের তুলনায় চিংড়ির উৎপাদন অনেক বেশি পাওয়া যাবে।
    বর্তমানে তিনি নিজেকে একজন সফল চিংড়ি চাষি বলে মনে করেন এবং সকল চিংড়ি চাষিকে পরিকল্পিতভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করার জন্য আহ্বান করেন। পরিশেষে, আজিজুর রহমান তথ্য প্রদানকালে উপস্থিত সকল চিংড়ি চাষি, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সংবাদ প্রতিনিধেদের মাঝে এই ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ইউএসএআইডি এবং প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন