বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

পাইকগাছাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ভারতীয় ভিসার অনলাইন সিরিয়াল এখন সোনার হরিণ

নিউজ অফ পাইকগাছা ॥
ইন্টারনেটের বিভিন্ন সিষ্টেমের দোহাই দিয়ে ২/৩ মাস ধরে লুকোচুরি করার পর এবার প্রায় বন্ধ হতে চলেছে অন লাইন ইন্ডিয়ান এ্যাপ্লিকেশন ফরমের এ্যাপয়নমেন্ট ডেট। ফলে খুলনা সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রোগী এবং হাজার হাজার ভারত ভ্রমণ প্রত্যাশি চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
চিকিৎসা সেবা, ব্যবসা, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াসহ ভ্রমণ পিপাসু বাংলাদেশীরা সবসময় পার্শ¦বর্তী বন্ধু প্রতীম দেশ ভারতে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। বিশেষ করে চিকিৎসার খরচ ভারতে কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশী রোগীরা ভারতের চেন্নাই, মাদ্রাজসহ কলকাতার এ্যাপোলো, পিয়ারলেস, কোঠারী, বি এম বিড়লা, ডিসান, রুবী, বারাসাত ক্যান্সার রিসার্চ এন্ড ওয়েল ফেয়ার সেন্টার ও ঠাকুর পুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, এসব হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন প্রায় এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী রোগী চিকিৎসার জন্য যায়। পূর্বে রাজধানী ঢাকার গুলশানস্থ ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার শাখা অফিস, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ভারতীয় ভিসা অফিস থেকে ইন্ডিয়ান ভিসা প্রদান করা হতো। সে ক্ষেত্রে আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করে এসব ভিসা অফিসে পাসপোর্ট জমা দিতে পারলেই আবেদনকারীরা ভিসা পেয়ে যেত। কিন্তু সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পাসপোর্ট জমা দেয়া ছিল কঠিন কাজ। এ সকল ভোগান্তি থেকে বাংলাদেশী ভিসা প্রার্থীদের মুক্তি দিতে হাই কমিশন অফ ইন্ডিয়া অন লাইনের মাধ্যমে আবেদন জমা নেয়া শুরু করে। এতে করে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীরা অন লাইনে তাদের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এ্যাপয়নমেন্ট ডেট নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে তাদের আবেদনপত্র জমা দিয়ে ভিসা প্রাপ্ত হতো। পরবর্তীতে খুলনা সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে হাই কমিশন অফ ইন্ডিয়া খুলনা শহরে ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার একটি শাখা ও ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন রিসিভিং সেন্টার খোলে। এর ফলে এই এলাকার মানুষ অতি সহজেই ভারতীয় ভিসা পাচ্ছিল। কিন্তু বিগত মে মাস থেকে মাঝে মাঝে অন লাইন ইন্ডিয়ান ভিসা ফরম পূরণ করে কাক্সিক্ষত এ্যাপয়নমেন্ট ডেট থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। তবে দুই তিন মাস এভাবে চললেও ৭ থেকে ১৫ দিনের চেষ্টায় একজন আবেদনকারী তার আবেদন জমা দেয়ার ডেট পাচ্ছিল। কিন্তু প্রায় ২ মাস আগে থেকে অন লইন ইন্ডিয়ান ভিসা ফরম পূরণ করে শেষ পাতায় অর্থাৎ হোম পেইজে ডেট এন্ড টাইম এ্যালোটমেন্ট টু এ্যাপ্লিক্যান্ট এ আসলে “নো এ্যাপয়নমেন্ট আর এ্যাবেল এ্যাবেল” লেখা আসছে।
একটি সূত্র জানায়, দিন রাত ২৪ ঘন্টার কোন এক সময় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের জন্য অন লাইনে ডেট দেখা গেলেও কেউ তার নাগাল পাচ্ছে না।
সূত্রটি আরো জানায়, ১ হাজার ব্যক্তির মধ্যে হয়তো একজন ব্যক্তি তার কাক্সিক্ষত ডেট পাচ্ছে। এদিকে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু অসাধু সাইবার ক্যাফে ব্যবসায়ীরা অন লাইনে ভিসার ডেট পাইয়ে দেয়ার কথা বলে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা আদায় করছে।
যশোরে অভয়নগর উপজেলার নোয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম হোসেন জানান, তার এক আত্মীয়কে ভারতে চিকিৎসা করানোর উদ্দেশ্যে অতি জরুরীভাবে প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ করে দুইটি পাসপোর্ট করিয়েছিলেন। কিন্তু দুই মাস ধরে ভিসা জমা দেয়ার ডেট পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। অবশেষে ডেট না পেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তার আত্মীয় মারা গেছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশী হাই কমিশন অফিসে ভারতীয়রা বাংলাদেশী ভিসার জন্য তাদের পাসপোর্ট জমা দিলেই ১ দিনের মধ্যে বিনা পয়সায় তারা বাংলাদেশী ভিসা পেয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশের ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনে বাংলাদেশীরা তাদের পাসপোর্ট জমা দিলে ৪শ’ টাকা এবং খুলনায় জমা দিলে ৬শ টাকা সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়। অনেক পাসপোর্টে ভিসা প্রদান না করলেও ভুল ত্রুটি দেখানো বা সার্ভিস চার্জের কোন টাকা ফেরৎ দেয় না ভারতীয় হাই কমিশন । এর ফলে ভিসা প্রত্যাশিদের মধ্যে ভয়ানক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সহজেই যাতে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সারাদিন ধরে ইন্ডিয়ান ভিসা এ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট জমা দেয়ার ডেট পেতে পারে তার জন্য সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভারতীয় হাই কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করার আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারীরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন