শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬

পাইকগাছার গর্বিত পিতা-মাতা নুরুল-পারুল দম্পত্তি; ঘানি টেনেই ছেলেকে পড়াচ্ছেন মেডিকেলে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥
পিতা-মাতা মানেই সন্তানের অভিভাবক। আর প্রতিটি পিতা-মাতাই চাই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ করতে। পিতা-মাতা ধনী কিংবা গরীব হোক, প্রত্যেক পিতা-মাতার উদ্দেশ্য একই। সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করা। কিন্তু সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে সমাজের সব পিতা-মাতার সক্ষমতা থাকে না। বিশেষ করে দারিদ্রতার কাছে হার মানতে হয় অনেক পিতা-মাতাকে। আবার সক্ষমতা থাকলেও নানা কারণে প্রিয় সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না অনেক পিতা-মাতা। তবে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে দারিদ্র কোন বাধা নয়, নিজেদের ইচ্ছা শক্তি যথেষ্ট সেটা প্রমাণ করেছেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সরল গ্রামের নূরুল-পারুল দম্পত্তি। গর্বিত এ দম্পত্তি এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা-মাতা। চরম দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেও নুরুল দম্পত্তি ঘানি (তেল) টেনে ছেলেকে পড়াচ্ছেন বেসরকারী একটি মেডিকেল কলেজে। আর মেয়েটি পড়ছে স্থানীয় উচ্চ মাধ্যমিক একটি প্রতিষ্ঠানে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করে। এরপর ছেলেটি ২০০৯ সালে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে পাইকগাছা কলেজ থেকে জিপিএ ৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করে প্রথমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগে ভর্তি হয়। এরপর খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুযোগ হওয়ায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যহতি নিয়ে গরীব ও মেধাবী কোটায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্র।

পাইকগাছা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামের মৃত জাহান আলী গাজীর ছেলে গর্বিত পিতা নূরুল হক গাজী জানান, সহায়সম্বল বলতে মাত্র দুই শতক জমির উপর বসতবাড়ী ছাড়া আর কোন কিছু নাই। দিন মজুর ও ঘানি টেনে চালাতে হয় সংসার। এরপর রয়েছে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া। ঘানি টানা হচ্ছে পিতা-মাতার পেশা। তবে পিতা-মাতা যখন বেঁচে ছিল তারা গরু দিয়েই ঘানি টানতো। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে আমার একটি গরু কেনারও সামর্থ নাই। তাই বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনই গত ১৫ বছর যাবৎ ঘানি টানার কাজ করে আসছি। বাজার থেকে সরিষা কিনে এনে প্রতি ২/৩ দিন পরপর সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরী করি। প্রতিবার সাড়ে ৪ কেজি সরিষা মাড়াই করতে প্রায় ৪ ঘন্টা দুই মন ওজন বোঝায় দেওয়া ঘানি টানতে হয়। প্রতি কেজি সরিষায় ৩০০ মিঃলিঃ তেল হয়। যা বাড়িতেই বসে ২৫০ টাকা লিটার প্রতি বিক্রি করা হয়। এতে খরচ বাদে ১৫০ টাকা মত লাভ হয়। এ ছাড়া সময় পেলেই করা হয় দিন মজুরের কাজ। এ ভাবেই অভাব অনটনের মধ্যদিয়েই সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়। সংসার কোন রকমে চললেও ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় ধার দেনা করে খরচ যোগাতে হয়। এমন  অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রসঙ্গে নুরুল-পারুল দম্পত্তি জানান, ইচ্ছে ছিল ছেলে মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করবো। শত অভাব অনটনের মাঝেও আল্লাহ সেই ইচ্ছা পুরণ করছে। প্রথম দিকে সংশয় প্রকাশ করলেও এখন মনে হয় সন্তানের লেখাপড়ার জন্য দারিদ্রতা কোন বাঁধা নয়। ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। জীবন সংগ্রাম অনেক কষ্টের হলেও ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে জেনে নিজেদেরকে গর্বিত পিতা-মাতা মনে হয়। সন্তানরা যখন লেখাপড়া শেষ করে দেশ জাতির ও সমাজের জন্য উপকারে আসবে তখন আমাদের সারা জীবনের ত্যাগ ও কষ্ট  সার্থক হবে। আমরা চাই, দারিদ্রতার কারণে যেনো কোন পরিবারের মেধাবী সন্তানরা ঝরে না পড়ে। এ জন্য প্রত্যেক পিতা-মাতাকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। এদিকে হতদরিদ্র নুরুল পরিবারের পাশে এসে সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যক্তিরা সহযোগিতার হাত বাড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা - পারুল, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পাইকগাছা শাখা, খুলনা। সঞ্চয়ী হিসাব নং- ৯৪৬০।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন